
বার্বাডোজের রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে এক দশকের আইসিসি ট্রফি খরা কাটালো ভারত। জয়ের পরেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মা।
ভূমিকা: এক দশক পর ভারতের বিশ্বজয়
স্মার্ট বার্তা ডেক্স, তারিখ: ২৯ জুন, ২০২৪
যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের যৌথ আয়োজনে পর্দা নামল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪-এর জমজমাট আসরের। নতুন দলের উত্থান, বড় দলগুলোর অপ্রত্যাশিত বিদায় এবং রুদ্ধশ্বাস সব ম্যাচে পরিপূর্ণ এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে টিম ইন্ডিয়া। ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ফাইনাল ম্যাচটি ছিল সত্যিই এক ক্লাসিক, যা বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে প্রোটিয়াদের স্বপ্নভঙ্গ করে দ্বিতীয়বারের মতো T20 World Cup শিরোপা ভারতের ঘরে তুলেছে।
রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল: যে জয়ে মিশে আছে অশ্রু ও ইতিহাস
টুর্নামেন্টের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটিই যেন অপেক্ষা করছিল ফাইনালের জন্য। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভারত শুরুতেই চাপে পড়ে। কিন্তু বিরাট কোহলি যখন ব্যক্তিগত ১২ রানে ছিলেন, তখন ডেভিড মিলারের হাতে জীবন পেয়ে যান, যা পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। সেই কোহলিই ৭৬ রানের অনবদ্য ইনিংসে দলের মেরুদণ্ড হন এবং ফাইনালের "প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ" নির্বাচিত হন। অক্ষর প্যাটেলের ৪৭ রানের ঝড়ো ইনিংসে ভারত ১৭৬ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায়।
জবাবে, হেনরিখ ক্লাসেনের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে একটা সময় মনে হচ্ছিল, প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনাল ২০২৪ জিততে যাচ্ছে প্রোটিয়ারা। শেষ ৩০ বলে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৩০ রান। কিন্তু সেখানেই মঞ্চে আবির্ভাব জাসপ্রিত বুমরাহ, আরশদীপ সিং এবং হার্দিক পান্ডিয়ার। অবিশ্বাস্য ডেথ বোলিংয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। বাউন্ডারি লাইনে সূর্যকুমার যাদব-এর সেই অবিশ্বাস্য ক্যাচটি ডেভিড মিলারের বিদায় নিশ্চিত করে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সব আশা শেষ করে দেয়।

শিরোপা জিতেই দুই কিংবদন্তির বিদায়: এক যুগের অবসান
এই বিশ্বকাপ জয় ভারতের জন্য শুধু এক দশকের অপেক্ষার অবসান ছিল না, এটি ছিল একটি যুগের সমাপ্তি। ম্যাচ সেরা হয়ে পুরস্কার নিতে এসে বিরাট কোহলি অবসর ঘোষণা করেন টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে, যা পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে আবেগাপ্লুত করে। এর কিছুক্ষণ পরেই অধিনায়ক রোহিত শর্মা অবসর ঘোষণা করে বলেন, "শিরোপা জেতার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর হতে পারে না।" ভারতের দুই মহাতারকার একসঙ্গে বিদায় এই জয়কে এক অবিস্মরণীয় ঐতিহাসিক মুহূর্তে পরিণত করেছে।
অঘটনের বিশ্বকাপ ও নতুন শক্তির উত্থান
এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপ "অঘটনের বিশ্বকাপ" হিসেবেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সহ-আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রের অঘটন ছিল সবচেয়ে বড় চমক, যখন তারা সুপার ওভারে পাকিস্তানকে হারিয়ে দেয়। অন্যদিকে, আফগানিস্তান ক্রিকেট দল নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো পরাশক্তিকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছে।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি
বাংলাদেশ বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিল সুপার এইটে খেলার লক্ষ্য নিয়ে এবং তা পূরণও করে। তবে সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও আফগানিস্তানের কাছে হেরে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স আশানুরূপ হয়নি। সেমিফাইনালে ওঠার সুযোগ থাকলেও ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় তা সম্ভব হয়নি।

টুর্নামেন্টের সেরা'রা
- প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট: জাসপ্রিত বুমরাহ (ভারত)
- সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক: রহমানউল্লাহ গুরবাজ (আফগানিস্তান) – ২৮১ রান
- সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি: ফজলহক ফারুকী (আফগানিস্তান) এবং আরশদীপ সিং (ভারত) – ১৭টি করে।
শেষ কথা: এক গৌরবময় সমাপ্তি
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪ ক্রিকেটপ্রেমীদের দিয়েছে এক মাসব্যাপী রোমাঞ্চ, অঘটন আর নাটকীয়তা। ভারতের শিরোপা জয়, দক্ষিণ আফ্রিকার আরেকটি স্বপ্নভঙ্গ এবং সবশেষে কোহলি-রোহিতের মতো কিংবদন্তিদের বর্ণাঢ্য বিদায়—সবকিছু মিলিয়ে এই আসর ইতিহাসের পাতায় এক বিশেষ স্থান দখল করে থাকবে।
সম্পর্কিত খবর পড়ুন
ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার কিংবদন্তিতুল্য স্টেডিয়াম ক্যাম্প ন্যু-এর সংস্কার কাজ এবং ক্লাবের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানুন।
পোস্টটি পড়ুন